জরুরি অবস্থা জারির জেরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের ১৬টি অঙ্গরাজ্য জোটবদ্ধ হয়ে এই মামলা করেছে। গতকাল সোমবার নর্দান ডিস্ট্রিক্ট অব ক্যালিফোর্নিয়া আদালতে মামলাটি করা হয়।
মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে অর্থ সংগ্রহে কংগ্রেসের অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হয়ে গত শুক্রবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। জরুরি ক্ষমতা বলে তিনি কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সামরিক নির্মাণ প্রকল্প বা দুর্যোগ তহবিল থেকে তাঁর চাহিদামতো অর্থ সংগ্রহ করতে পারবেন।
Eprothom Aloক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল জেভিয়ার বেসেরা বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগের অপব্যবহার ঠেকাতে তাঁরা বিষয়টি আদালতে তুলেছেন। কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে করদাতাদের অর্থ একতরফাভাবে হরণ করা থেকে ট্রাম্পকে থামাতেই এই মামলা করা হয়। প্রেসিডেন্টের অফিস কোনো নাট্যমঞ্চ নয়।
আদালতে দায়ের করা মামলায় জরুরি অবস্থার আওতায় ট্রাম্প যাতে কোনো কাজ করতে না পারেন, সে ব্যাপারে প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার নেতৃত্বে যে ১৬ অঙ্গরাজ্য মামলা করেছে, সেগুলো হলো কলোরাডো, কানেটিকাট, ডেলাওয়ার, হাওয়াই, ইলিনয়, মেইন, ম্যারিল্যান্ড, মিশিগান, মিনেসোটা, নেভাদা, নিউ জার্সি, নিউ মেক্সিকো, নিউইয়র্ক, ওরেগন ও ভার্জিনিয়া।
অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে ম্যারিল্যান্ডের গভর্নর ল্যারি হোগান রিপাবলিকান পার্টির। বাকি অঙ্গরাজ্যগুলোর গভর্নররা ডেমোক্র্যাট।
শুক্রবার জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরই প্রথম একটি মামলা হয়। পাবলিক সিটিজেন নামের একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ আদালতে মামলাটি করে।
জরুরি অবস্থা ঘোষণার পক্ষে সাফাই গেয়ে শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেছিলেন, জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি দেয়াল নির্মাণে ৮০০ কোটি ডলার পাবেন। দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংকটের মুখোমুখি। মাদক, চোরাচালান চক্র, অবৈধ লোকজনের প্রবেশ ঘটছে। এটা অগ্রহণযোগ্য। প্রত্যেকেই জানে, দেয়াল নির্মাণ করা হলে এতে কাজ হবে। তবে তাঁর ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আদেশে স্বাক্ষর করে দিয়েছি, এখন আইনি লড়াই হবে।’
ট্রাম্পের জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ছবি: এএফপি
দেয়াল নির্মাণের জন্য ৮০০ কোটি ডলার সামরিক নির্মাণ খাতের প্রকল্প থেকে নেওয়া হতে পারে। তবে ট্রাম্প যে পরিমাণ অর্থের কথা বলছেন, তা দেয়াল নির্মাণের সম্ভাব্য ব্যয় থেকে অনেক কম। সীমান্তে ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার দেয়াল নির্মাণে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।
সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের লক্ষ্যে বাজেট ইস্যুতে বিতর্কের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রেকর্ডসংখ্যক ৩৫ দিন বন্ধ ছিল ফেডারেল সরকারের একাংশের কাজকর্ম (শাটডাউন)। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেয়াল নির্মাণে ৫৭০ কোটি ডলার না পেলে কোনো ধরনের বাজেট নথিতে সই করবেন না বলে জানিয়েছিলেন। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের বিষয়টি তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। তবে প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে রাজনৈতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করে ২৫ জানুয়ারি ফেডারেল সরকারের চাকা ফের সচল করেন ট্রাম্প। ফেডারেল সরকারকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ দেন তিনি। তাঁর দাবি অনুসারে কংগ্রেস অর্থ বরাদ্দ না দিলে ফের শাটডাউনের হুমকি দেন তিনি। তবে ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা সীমান্ত নিরাপত্তা ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছালে ওই শাটডাউন ঠেকানো সম্ভব হয়। দুই পক্ষের সম্মতিতে কংগ্রেসে এ–সংক্রান্ত একটি বিল পাস হয়।

No comments:
Post a Comment